Wednesday 26 August 2015

কেউ কি জানেন অ্যালার্জি মূলত কি?? (What is Allergy)

অ্যালার্জি (Allergy) সাধারণত মানুষের শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না এমন কিছু নির্দিষ্ট পদার্থের প্রতি কোনো কোনো ব্যক্তির সংবেদনশীলতাজনিত অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বস্ত্ত বা অ্যালার্জেন (allergen) আমাদের চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে। গৃহস্থালির ধুলাবালি, বিভিন্ন ফুলের রেণু, পশুর লোম ইত্যাদি পরিচিত বস্ত্তগুলি অ্যালার্জেনের উদাহরণ। অ্যালার্জিগত অবস্থার দৃষ্টান্ত হলো একজিমা, অ্যালার্জিক নাসিকাপ্রদাহজনিত সর্দি, জ্বর, হাঁপানি, আমবাত (urticaria) ও খাদ্য অ্যালার্জি। অ্যালার্জেন সংস্পর্শ, গলাধঃকরণ (খাদ্য), শ্বসন (রেণু) অথবা ইনজেকশন (ঔষধ) ইত্যাদির মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করতে পারে।
Allergy patient picture HD

বায়ুবাহিত ফুলের পরাগ বা রেণু, ছত্রাকের স্পোর, গৃহস্থালির ধুলাবালি, পশুর লোম, প্রসাধনী সামগ্রী ইত্যাদি প্রশ্বাসী অ্যালার্জেন শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শ্বসনতন্ত্রে প্রবেশ করে। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী সুপরিচিত খাদ্যসামগ্রী হলো দুধ, ডিম, চিংড়ি, গম, কয়েক প্রজাতির মাছ, গরুর মাংস ইত্যাদি। কৃত্রিম তন্তুরকাপড়, কোনো কোন উদ্ভিদ, ফুল, রঞ্জক, প্রসাধনী, রাসায়নিক পদার্থ ও কীটনাশক মানুষের চামড়ায় অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশে অ্যালার্জিগত জটিলতার শিকার অধিকাংশ মানুষই একাধিক বস্ত্তর ব্যাপারে সংবেদনশীল। অ্যালার্জি সর্বাধিক পরিচিত অসুখের একটি। এক জরিপে দেখা গেছে, মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে ১০% তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী অ্যালার্জিতে ভোগে। অ্যালার্জি আক্রান্তদের অনেকেরই এ স্বভাব বংশগত। একটি পরিবারে কারও কোনো নির্দিষ্ট বস্ত্ততে অ্যালার্জি থাকলে তার সন্তানদের মধ্যেও অভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি দেখা দেওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। ভাবাবেগজনিত হেতুও কোনো কোনো অ্যালার্জিতে ইন্ধন যোগাতে পারে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালের অ্যালার্জিঘটিত রোগীদের নিকট থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায় যে, শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত জীবনের যে কোনো পর্যায়ে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। রোগী কতটা সময় ধরে কতটা অ্যালার্জেন গ্রহণ করেছে তার ওপরই প্রায়শ অসুস্থতার মাত্রা নির্ভর করে। কোনো কোনো লোক মারাত্মক অ্যালার্জি সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই সংবেদ্যতা হারিয়ে অত্যন্ত দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে অ্যালার্জিক সংবেদ্যতা ক্রমশ  হ্রাস পায়।
অ্যালার্জি ঔষধেই উপশম হয়। কোনো কোন ঔষধ কারও কারও ক্ষেত্রে আবার নিজেই অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। অ্যান্টিহিস্টামিন ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ উভয়ক্ষেত্রেই সাধারণত কার্যকর। অ্যালার্জি থেকে নিস্তার পাওয়ার সর্বোত্তম পন্থা হলো অ্যালার্জেন শনাক্তি এবং সেগুলি পরিহার। 
পোলেন অ্যালার্জেন (pollen allergen)  অ্যালার্জি প্ররোচক রেণু যা বংশবিস্তারের জন্য পুরুষ ফুলের জননাঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়। রেণু গুঁড়া সূক্ষ্ম, সাধারণত হলুদাভ। কখনও কখনও একত্রেও থাকে। এদের মধ্যে অনেক রেণুই বায়ুবাহিত এবং বিভিন্ন রোগ ছড়ানোর প্রধান বাহক হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের ফুসফুসীয় সমস্যা তৈরি করা ছাড়াও এগুলি ব্যাপকভাবে নাসিকা এবং শ্বাসনালীর উপরের দিকে বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। যেমন বিভিন্ন সময়ে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। এ ধরনের রোগের প্রকোপ নির্ভর করে ওই এলাকার রোগ সৃষ্টিকারী উদ্ভিদের রেণুর ক্ষমতা, আবহাওয়া এবং বসবাসকারী জনগণের জীনগত উপাদানের ওপর। দেখা গেছে, শতকরা ১০-৩৫ জন এ ধরনের রোগে একবার বা কয়েকবার ভোগে। পৃথিবীতে এ জাতীয় রোগ তৈরির জন্য মূলত ঘাস এবং সরলবর্গীয় বৃক্ষকে দায়ী করা হয়। বাংলাদেশে রেণুঘটিত রোগের প্রকটতা খুব বেশি। রেণুঘটিত রোগ তৈরির জন্য যেসব উদ্ভিদ মূলত দায়ী সেগুলি হচ্ছে Lantana camaraAcaciaspp., Cassia fistulaCocos nuciferaEleusine indicaDatura metelAmaranthus spinosusCynodon dactylon,Achyranthes asperaBrassica campestrisCannabis sativaCarica papayaMangifera indica, and Xanthium stramarium

ভিডিও দেখুনঃ 



0 মন্তব্য:

Post a Comment